সাইফুল ইসলাম কবির, অস্ট্রিয়া ভিয়েনাঃ একটি রাষ্ট্রের ও সমাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে তরুণ সমাজের উপর। যে কোন জাতির প্রানশক্তি হলো তাদের যুব সমাজ। যুবকরাই জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতিক। তারা দেশ ও জাতির সোনালি স্বপ্ন। কেননা আজকের যুবকরাই পরিচালনা করবে আগামীর রাষ্ট্র সমাজ ও জাতিকে। তাদের ক্যারিশমাটিক প্রেমময় রূপ ও শক্তির কারনে, জনতা লাভ করবে নতুন জীবন, হতদরিদ্র, নিগৃহীত, প্রবঞ্চিত, নিঃসহায়, মানুষ প্রদীপ্তি হবে নব উদ্দীপনায়। আজকের বাস্তবতায় সম্প্রতি সেই যুব সমাজের প্রতি তাকালে আমাদের অবাক হতে হয়। কারণ দেশ ও জাতির কর্নধার এই যুব সমাজ নৈতিক অবক্ষয়ে আকন্ঠ নিমজ্জিত। এদের অনেকেরই সামাজিক কিংবা নৈতিক মূল্যবোধ নেই। আজ এই যুবকদের মধ্যে কেউ চাঁদাবাজী, কেউ ছিনতাই, কেউ চুড়ি- ডাকাতি, কেউ মাদকাসক্ত, কেউ অসামাজিক, কেউ ধর্ষন, কেউ অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত। কেন এমন টি – নানাবিধ কারণ হতে পারে ★ যে-মন – সামাজিক অনৈতিকতা, অভিভাবকদের আদর্শহীনতা, শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য, অপসংস্কৃতি, চুরি- ডাকাতি, অম্রবাজি, ছিনতাই এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যুব সমাজ কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়াছে। তারা এমন এক জগতে প্রবেশ করেছে এবং আসক্ত হয়ে পরেছে যে তারা স্বাভাবিক জীবন বিকাশের সম্পুর্ন পরিপন্থী। আমাদের যুব সমাজের মধ্যে যে-সব নৈতিক অবক্ষয় অনুপ্রবেশ করেছে, তার মুলে রয়েছে অবাধ দুর্নীতি। আমি এক কথায় বলতে চাই পৃথিবীতে যে কটা দেশকে দুর্নীতি গিলে ফেলেছে সেই রাষ্ট্রে সুস্থ সাংস্কৃতি ফিরে আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জীবন বাজী রেখে রাষ্ট্রের হাল ধরেছে। আজ অনেক ঐতিহাসিক অর্জন ও আমাদের হয়েছে এটাকে ধরে রাখার জন্য আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ অনবদ্য ভূমিকা পালন না করলে আমাদের সকল অর্জন বিফলে যাবে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ধনাঢ্য ব্যক্তি বর্গের মাধ্যমে ও তাদের প্ররোচনায় যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসার ঘটছে। যেনমঃ – রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও উদীয়মান নেতা বা সমাজপতিরাই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে প্রথমে মসজিদ মাদ্রাসা ও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তার পর শুরু হয় আসল খেলা। একজন রাজনৈতিক নেতা তিনি আগামীতে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, কিন্তু তিনি জনগণের কাছে পরিচিত নন এখন হবেন কি ভাবে ? তার পরিচিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকার যুবকদের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দেন। আয়োজন কর খেলা দুলার, আয়োজন করে গান বাজনার, মাইকিং করও ঐ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অমুক ভাই জনদরদি ইত্যাদি ইত্যাদি। সে অনুষ্ঠানে নেতা ঘোষণা করেন এত সুন্দর আয়োজন করার পেছনে যারা রয়েছেন ঐ সংঘ কে দশলাখ টাকা অনুদান করছি। যুকরা সেই টাকার বেশির ভাগ অংশ দিয়ে তাদের পকেট গরম করে। এর পর কি হয় তা বুঝতে পারছেন ? নেতা কি একটি বারের জন্যে ও ভাবছেন সেখানে কি শুধু খেলাধুলা গান বাজনাই হয় নাকি এর পছে অসামাজিক কাজও হয় ? নেতা হবেন আপত্তি নেই আদর্শবান নেতা হন। খেলাধুলার নামে চলে নানা ধরনের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, জুয়া ও মদ্যপান। এভাবে যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। দুংখজনক হলেও বাস্তবতা হলো যেসব নেতার মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় থেকে যুবসমাজ কে ফিরিয়ে আনার কথা, কিন্তু সেসব নেতার মাধ্যমেই যুবসমাজের অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকা জনক হারে । এটা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং জাতির জন্য কল্কও বটে। সত্যি হলো আজকের যুবসমাজ সুন্দরের পথ ত্যাগ করে উগ্র ও বিকৃত জীবনযাপনে উদগ্রীব হয়ে উঠছে। এবং চরম অবক্ষয়ের মধ্যে জীবন খুঁজে বেড়ায়। আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে টিভি, সিনেমা, ভিডিও, ডিস এন্টিনায় যেসব নাটক, ছবি, নাছ,গান, কনসার্ট, ফ্যাশন শো বা বিনোদনমুলক কুরুচিপূর্ণ ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে, তা অধিকাংশ জীবনধর্মী নয় কুরুচিপূর্ণ। মনমানসিকতার সঙ্গে মোটেই সাঞ্জস্যপূর্ন নয়। আমি বলছিনা যে সবই খারাপ হচ্ছে দু চারটি ভালো ও হচ্ছে। কিন্তু এত খারাপের মাঝে ঐগুলা খুঁজেই তো পাওয়া যায় না। আর খারাপ জিনিসই তো যুব সমাজ কে বেশি আনন্দ দেয়। এখন অনেক যুবকের হাতে মেয়েদের মত বলা দেখা যায়, কানে দুল বা রিং দেখা যায়, গায়ে টাটুঘোড়া দেখাযায়, অদ্ভুত সব পোশাক পরে, ডিসকো নাচ, মদ পার্টি আর অবাধ মেলামেশা। তাদের এসব আচার আচরণ যেমন কুরুচিপূর্ণ, তেমনি অপসংস্কৃতির সহায়ক। আমাদের যুবসমাজ আজ এ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়াছে। আমাদের দেশের মেয়েরাও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। তারাও আজ নারীর অধিকার ও সমতা ফিরিয়ে আনতে খেই হারিয়ে ফেলছে। তারা আধুনিক সোসাইটির নামে নাচ গান, পার্টি, মদ সিগারেট, তাস খেলে। আমি সমতায় বিশ্বাস করি কিন্তু সেখানে থাকতে হবে শালীনতা। আজ সমাজে ধর্ষন বেড়ে যাওয়া পেছনে এটিও একটি বড়ো কারন। আরও একটি জিনিস লক্ষনীয় যে কোন এমপি মন্ত্রী বের হলেই তার গাড়ির সামনে এবং পিছনে শয়ে শয়ে গাড়ি ও হোন্ডা থাকে এদের বেশির ভাগই যুবক। এদের কোন কাজকাম নেই এমপি মন্ত্রীর খাশ লোক এদেরকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে লালন পালন করে। আর এরা চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, দখল বাজী এসবের সাথে জরিয়ে সমাজের সাধারন মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এই অপ রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে আমাদের এক্ষনি বেরিয়ে আসতে হবে, না হয় আরও মহা সংকটে পরতে হবে আমাদের। আমাদের আগামীর কর্ণধার এই যুবসম্প্রদায়কে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব, আমাদের অভিভাবক, সমাজের ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে হবে। লেখায় ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা করবেন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু