মোঃ আওলাদ হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি,দৌলতখান(ভোলা): বর্তমান বিশ্বে বেশ কত গুলো শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ শিক্ষা সেক্টরের সবক’জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এই সেক্টরটাকে আধুনিক, মানসম্মত, যুগোপযোগী,বিজ্ঞানসম্মত ও কর্মীমূখী করার জন্য বদ্ধ পরিকর।
এহেন পরিস্থিতিতে বর্তমান সমাজে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি, আলিয়া মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থাটি বেশী ফলপ্রসূ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের কেন পড়াবেন সে ব্যাপারে আমার পরামর্শ গুলো হলোঃ
০১.মাদরাসার শিক্ষার্থী নবীর (সাঃ) ওয়ারিস বা উত্তসূরী হয়ে গড়ে ওঠে !
০২.মাদরাসার ছাত্রের পিতা-মাতা বৃদ্ধাশ্রমে থাকা লাগেনা,পরিবারের সাথেই থাকে।
০৩.মাদরাসার ছাত্র/ছাত্রী বিড়ি,সিগারেট,মাদক ও নেশা মুক্ত।
০৪.মাদরাসার ছাত্র/ছাত্রী বিনয়ী নম্র ও মানব দরদী হয়।
০৪.মাদরাসার ছাত্র/ছাত্রী জঙ্গী,সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হয় না।
০৫.মাদরাসার ছাত্র/ছাত্রী পরিনত বয়সে হালাল খাওয়ার চেষ্ট করে।
০৬.দূর্নীতিবাজের তালিকায় মাদরাসার ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা নগন্য।
★ যা শেখানো হয় আলিয়া মাদ্রাসায়ঃ
আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যসূচি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণ বিভাগে শিক্ষার্থীদের ইসলামি শিক্ষা, কলা ও সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয়। তাদের পাঠ্যসূচিতে কুরআন,হাদীস,ফিকহ, আরবি, ইসলামের ইতিহাস ছাড়াও রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান ও আইসিটি পড়ানো হয়। অন্যদিকে, মুজাব্বিদ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অন্যান্য সাধারণ বিষয়ের সঙ্গে পড়ানো হয় তাজবিদ। বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে পড়তে হয় কুরআন, হাদিস, ইসলামি আইন ও আরবি। আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে দাখিল (এসএসসি সমমান) ও আলিম (এইচএসসি সমমান) পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে পড়ানো হয় না।
আলিয়া মাদ্রাসায় ইবতেদায়ি থেকে কামিল পর্যন্ত ১৭ বছরের পড়ালেখায় রয়েছে পাঁচটি ধাপ। ইবতেদায়ি বা প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআন শরিফ পড়া ও মুখস্ত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এই পর্যায়ের অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামের মৌলিক বিষয়, আরবি, বাংলা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল ও সাধারণ বিজ্ঞান।
দাখিল (মাধ্যমিক) পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কুরআন পড়া ও মুখস্ত করার সঙ্গে যুক্ত হয় কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বা তাফসির। এই পর্যায়ে এসে শিক্ষার্থীদের আরবি, ইসলামি দর্শন, ইসলামি আইন ও তত্ত্ব এবং এগুলোর ব্যবহার পড়ানো হয়। আছে কলা,মুজাব্বিদ ও বিজ্ঞান বিভাগ পছন্দের ধাপ।
আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যায়ে বিজ্ঞান বা কলা বিভাগকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে শিক্ষার্থীদের জন্য। উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই কুরআন ও হাদিস, ইসলামি আইন, শরিয়া আইন, উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামের ইতিহাস পড়তে হয়। অন্যদিকে, কলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের আরবি ও ফার্সি ভাষা এবং বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয় পড়তে হয়।
স্নাতক পর্যায়ে ফাজিল কোর্সে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয়গুলো আলাদা আলাদা করে শেখানো হয়। অন্যদিকে, স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কামিল কোর্সে শিক্ষার্থীদের কেবল ধর্ম বিষয়ে পড়ানো হয়। এই পর্যায়ে এসে তাদের হাদিস, তাফসির (কুরআন শরিফের ব্যাখ্যা), ইসলামি আইন ও আরবি সাহিত্য বিশেষায়িতভাবে পড়ানো হয়।
কামিল পর্যায়ে শেখানো হয় কুরআন,হাদীস,ফিকহ, তাফসীর,আরবী সাহিত্যেরি উচ্চতর জ্ঞান।বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা এখন যথেষ্ট আধুনিক ।
পরিশেষে বলবো-
বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষা ও সাধারন শিক্ষার সার্টিফিকেটের মান সমান। মাদরাসা শিক্ষায় আধুনিক শিক্ষার সকল বিষয় রয়েছে,উপরন্তু কু’রআন হাদীস, আরবীসহ ইসলামী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা থেকে মেডিকেল কলেজ,বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ ছাড়াও রয়েছে আরব বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কলারশিপ নেয়ার রয়েছে ব্যাপক ব্যবস্থা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল,বুয়েটসহ সকল পাবলিক পরীক্ষায় মাদরাসা পডুয়ারা ঈর্ষনীয় ফলাফল অর্জন করে চলছে।
সাম্প্রতিক প্রকাশ হওয়া ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষায় সাধারন শিক্ষা ক্যাডারে মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র মেধা তালিকায় ১ম স্থান অর্জন করেছে।সম্ভবত ২০১৩-১৪ শিক্ষা বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে,সেই দুজনই মাদরাসার ছাত্র।
আধুনিক শিক্ষার সাথে নৈতিক শিক্ষার সমন্বয় করে একজন চরিত্রবান মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বড় অবদান রাখছে। পরকালে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত চরিত্রবান সন্তানের জন্য পিতামাতা বিশেষ পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন। আরবী ও ইংরেজী সমানভাবে জানার কারনে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করছে ও অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে।
লেখক,
মোঃ আওলাদ হোসেন
বিএসএস অনার্স, এমএমএস(রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
এমএ,কামিল( ফিকহ)
সহকারী শিক্ষক, দক্ষিণ বড়ধলী আহমদিয়া আলিম মাদরাসা।
দৌলতখান, ভোলা।